নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শুক্রবার ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিতর্কিত ভাবনা-আশরাফ পিকো

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ , ১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতেই পারে,তার মানে এই নয় যে তুমি অসমর্থ, ব্যর্থ ।তোমরা ই তো বাংলাদেশ ।আবার ঘুরে দাঁড়াবে ।

এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী থেকে শুরু করে যার সাথে জীবনে দুবার দেখা হয়নি সেও ফোন করে রেজাল্টের খবর জানতে চায়। যাদের রেসাল্ট আশানুরূপ হয়নি তাদের পরিবারকে জবাব দিতে গিয়ে কতটা বিব্রত হতে হয় সেটা কী ভেবে দেখেছেন ? আপনি যদি তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন তাহলে অপেক্ষা করুন, রেসাল্ট ভালো হলে সে নিজ থেকেই জানাবে
এই বয়সের শিক্ষার্থীদের মন বেশ আবেগপ্রবন। কেউ যদি রেসাল্ট খারাপ করে আমরা এমন একটা দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকাই যেন সে একজন লুজার।
ফ্যামিলি গুলো এমন আচরণ করে যেন একটা পনেরো বছরের কিশোর অংকে খারাপ করার কারণে পৃথিবী তার কক্ষ পথ হারিয়ে ফেলেছে ! পাশের বাসার আন্টি হয়ত জানে যে সে পরীক্ষায় খারাপ করেছে, তবু বাসায় এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে এসে রস করে করে বলতে থাকবে – তার ছেলে গোল্ডেন পেয়েছে !
অনেক অভিভাবকদেরই নিজের সন্তানের সাথে অন্যের সন্তানের তুলনা করার বদভ্যাস আছে ! আপনার সন্তান যদি আপনার সাথে আপনার চাইতে অধিক সফল অধিক মেধাবী কারো তুলনা করে তখন আপনার নিজেকে কেমন লাগবে? যখন সে বড়দের কাছ থেকে সারাক্ষণ এটাই শুনে আসে যে তোমাকে দিয়ে হবে না; শুনতে শুনতে একসময় সে বিশ্বাস করতে শুরু করে এবং একবার বিশ্বাস করে ফেললে তাকে দিয়ে সত্যি সত্যি অনেক কিছু হবার থাকলেও আর কিছুই হয় না।
তোমরা যারা পরীক্ষায় খারাপ করেছো কিংবা আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পারোনি, আশে পাশের মানুষের কথা শুনে একটুও ডিপ্রেশনে ভুগবে না। তোমার রেসাল্ট আসলে যাই হোক না কেন তাদের কিছুই আসে যায় না। তারা নেহাত সৌজন্য রক্ষা করার জন্য ফোন করে একটু খোঁজ খবর নিয়েছে; এর বেশি কিছু না।
যখন তুমি পড়ালেখা শেষ করে চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলবে তখন তোমার খোঁজ নেবার জন্য এই সব শুভাকাঙ্ক্ষী’দের কাউকেই পাশে পাবে না। তাহলে আজকে কেন তাদের কথা ভেবে আজকের সময়টা নষ্ট করবে ?
এখন তো তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত করার সময়।
নিজের জীবনের একটা গল্প শেয়ার করতে চাই। আমি অনেক দিন আগে BfA শেষ করলেও নানান ব্যস্ততায় এখনো MFA করা হয়নি। BFA শেষ করার পর আমাদের ক্লাসের সবাই সার্টিফিকেট উঠালেও আমিই একমাত্র ব্যাক্তি যে এখন পর্যন্ত সার্টিফিকেট উঠাইনি। তার চেয়েও বড় কথা হল- BFA তে আমার সিজিপিএ কত; আমি এখন পর্যন্ত সেটাও জানি না।( সেটা জানতে হলেও দরখাস্ত দিয়ে রেকর্ড বুক থেকে চল্লিশটা সাবজেক্টের সব গুলো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হবে। তাও করিনি।)
আমি যদি BFA তে ২.৫ পাই তাহলেও আমি এখন যে লাইফটা লিড করছি ৩.৫ পেলেও একই লাইফটাই লিড করতাম। যেহেতু পয়েন্টের পার্থক্য আমার লাইফে কোনই পার্থক্য আনতে পারছে না সেহেতু আমিও সিজিপিএ কত সেটা জানার কৌতূহল বোধ করছি না।নিজের সিজিপিএ জানতে না চাওয়াটা হল আমার প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের মৌন প্রতিবাদ।
বিখ্যাত লেখক তল্‌স্তোয় নারীদের নিয়ে কৌতুক করে বলতেন ” মেয়েরা সাধারণত এতটাই বোকা যে একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে এবং একজন বোকা মেয়ের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।”
আমারও তলস্তয়ের মত করে বলতে ইচ্ছে করছে- আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধার মাপকাঠিটা এমন যে, একজন গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্র এবং একজন ফেল করা ছাত্রের মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই।

আশরাফ পিকো
ফ্রী লেন্স জার্নালিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
« Aug    
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »