নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      সোমবার ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব কিছুই কি শেষ ? না ,যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 1 month আগে

আশরাফ পিকো: বুকের ভেতর আস্ত একটা ঝড় ,রক্তে আগুন লাগা জেদ, ১৫ বছরের লজ্জাকর পরাধীনতার শেকল ছিঁড়তে ঢাকার রাজপথে ছাত্রদের সাথে দৌড়াচ্ছে অগণিত সাধারন মানুষ ।অভাবনীয় দৃশ্য টা ছিল ঠিক এই রকমই ,শিক্ষক ,অভিভাবক,গৃহিণী কিংবা গৃহবধূ ,মমতাময়ী মা কিংবা অভিমানী বাবা সবাই রাজপথে। কি এক অজানা স্বপ্ন তাদের চোখে মুখে। তারা কেউ খালি হাতে আসেনি ,যে যা পারে যা খুশি তাতেই তাদের মনের ক্ষোভ লিখে নিয়ে এসেছে যেন ১৫ বছরের চেপে রাখা মুখ তারা জোর করে নিজেরাই খুলে নিয়েছে। যেন একেকজন বিদ্রোহী কবি একেকজন যোদ্ধা ।

কি আশ্চর্য , মহল্লার মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে যে দুষ্ট ছেলেটা নিলঞ্জনা কে নিয়ে গান গাইত সে দেশ প্রেমের গান গাইছে ,বাড়ির সেই ছেলেটা যাকে সবাই অকাজের ভাবতো সে মিছিলের অগ্রভাগে শ্লোগান দিচ্ছে ,’’আমার ভাই মরল কেন শেখ হাসিনা জবাব দে । ”দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গেলো সরকার বিরোধী কথা আর ছবিতে প্রতিটি দেয়াল রূপ নিলো ক্যানভাসে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায়, রূপসা থেকে পাথুরিয়া ।

আর এভাবেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে গেলো সরকার পতনের আন্দোলন ,সাধারন মানুষের সরকারের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ ,ঘৃণা ,প্রতিবাদ আর আক্রোশ জানানোর ক্ষেত্র হয়ে উঠলো রাজপথ। যেন একাত্তর ফিরে এলো । অদম্য সাহসী আবু সাইয়িদ, ইয়ামিন মুগ্ধ সহ অসংখ মানুষের তাজা রক্ত স্বাধীন দেশের রাজপথ কে লজ্জিত করল । শহীদের রক্ত বৃথা যায়না,গোটা বাংলাদেশ যেন একটি পরিবার হয়ে গেলো,রক্তে আগুন লাগা সংকল্পে সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লো খুনি সরকারের বিরুদ্ধে ।

এর পর থেকেই শ্লোগান শুরু হয়, ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’ বুকের ভেতর বইছে ঝড়,বুক পেতেছি গুলি কর’।

অতঃপর হাজারো মৃত্যু , অগণিত মানুষের আহত কিংবা অন্ধত্ব অথবা পঙ্গুত্ব হয়ে যাওয়ার বিনিময়ে আসলো সেই স্বপ্নের বিজয়। ১৫ বছরের গুম খুন কারাবরণ, অত্যাচার নির্যাতনের এক পরাধীন সময়ের পতন ঘটলো,নতুন মুক্তির স্বাদ পেলো অভাগা বাংলাদেশ ।

এই সংগ্রামের একজন সামান্য যোদ্ধা হিসাবে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারার গর্ব আমারও আছে কিন্তু যাঁদের হারিয়েছি যারা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাৎরাচ্ছে যাঁদের চোখ কিংবা অঙ্গহানী হয়েছে, যে মা এখনো ছেলের কবরের পাশে বসে আছেন, যে বাবা রাতে খুব লুকিয়ে কাঁদেন,যে বোন আর কোনদিন ভাইয়া কে আবদার করতে পারবে না ,যে অবুঝ শিশু তাঁর বাবার কাঁধে আর কোনদিন চড়তে পারবে না ,যে শহীদের স্ত্রী প্রতি রাতে জায়নামাজে বসে চোখের জলে মহান আল্লাহ্ র দরবারে কাঁদছেন ।

আমরা তোমাদের কিছুই ফিরিয়ে দিতে পারবনা শুধু কথা দিচ্ছি যে স্বপ্ন নিয়ে তোমাদের স্বজনেরা যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের স্বপ্ন পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো ,যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »