নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শুক্রবার ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সম্প্রীতির চোখের জল — আল আমীন শাহীন

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ , ৫ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, কখনো কালো মেঘ সাদাকে আচ্ছাদিত করার চেষ্টা করলেও, একসময় কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে, তখনই নীলাম্বরে সাদা মেঘ আরো উজ্ঝ¦ল হয়। আকাশের শে^ত শুভ্রতা কাশবনে ছড়ায়, কাশফুলের দোলার সৌন্দর্য মুগদ্ধতায় মন আনন্দে ভরে যায়। প্রকৃতিকে উপভোগ করার এমনই সময়ে আসে শারদীয় দূর্গোৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক আয়োজন মনে করিয়ে দেয় নানা কিছু। শৈশবের নানা স্মৃতি। বেড়ে উঠেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পাড়ের কালাইশ্রীপাড়ায়। এমনই সময়ে এ পাড়ার কথা বেশী মনে হয়। পুরনো বন্ধুদের মুখ ভেসে উঠে। শারদ সময়ে সাম্প্রতিককালে সম্প্রীতি শব্দটির আহবান যখনই শুনি, তখনই কালাইশ্রীপাড়ার সম্প্রীতি উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সম্প্রীতির সুখানন্দ সারা মনে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে দূর্গোপূজোর সময়ে গুরুচরণ আখড়ার পূজামন্ডপ,নানা আনন্দ আয়োজন, প্রসাদ,বোধন থেকে দশমী- বিসর্জন পর্যন্ত নানা ঘটনা। বৈষম্যহীন ভালবাসার মানুষের স্মৃতি মনকে ভিন্নরকমের প্রশান্তি দেয়। সুখের জন্যই প্রয়োজন সম্প্রীতি, উপলব্ধি করি তা রন্দ্রে রন্দ্রে। মনে পড়ে কালাইশ্রীপাড়ার রূপালী দির কথা। এ পাড়া থেকে বহু যুগ আগেই চলে গেছেন সীমান্ত পেরিয়ে অন্যদেশে। কয়েক বছর আগে ত্রিপুরায় প্রবাসে গিয়ে রাস্তায় ঘুরছি। হঠাৎ দেখি, পড়ন্ত বয়সী এক মহিলা এগিয়ে আসছে আমার দিকে,আমার নাম জিজ্ঞেস করে বড় বড় চোখে আমাকে খুটিয়ে দেখছেন, আমি হ্যাঁ বলতেই দেখি উনার চোখে জলের ধারা। জড়িয়ে ধরলেন পথের মাঝেই। কেমন আছিস ভাই আমার, তোর কথা মনে হয়। এভাবে দেখা হবে ভাবি নি। চিনতে আমার একটু দেরী হয়েছে, এযে রূপালী দি। আমার সফর সঙ্গীরা সবাই অবাক।দিদি বল্লেন, চল ভাই বাড়িতে চল। রূপালী দির সঙ্গে এ পাড়ায় শৈশব কৈশোর কালে অনেক সময় কেটেছে আমার। সুন্দর সেলাই করতেন সে গুলো শিখতাম, গান গাইতেন পাশে বসে শুনতাম, নানার রকম প্রসাদ খাবার রাখতেন আমার জন্য। দিদিকে প্রবাসে পেয়ে কি রকম সুখ পয়েছিলাম সেটা বুঝাতে পারবো না। এটাই সম্প্রীতির সুখ। কালাইশ্রীপাড়ায় দূরন্ত সময়ে ভোরে ফুল চুরি ছিল একটা রুটিন। এ পাড়ার অনন্ত মাসি, সবাই ভয় পেত তাঁকে, অমর একুশের তোড়া বানাতে ফুল চুরি করতে গিয়ে মাসির দরজার ছিটকিনি আটকে বন্ধী করে রেখেছিলাম বেশ কিছু সময়। ঘরে বন্দী মাসি বকাঝকা করেছে জানালা দিয়ে, ফুল তোলা শেষে দরজা খুলে দিতেই তাড়া করেছে লাঠি নিয়ে।হৈ হোল্লোর করে পালিয়ে গেছি, পরে দেখা হলেই লাঠি নিয়ে তাড়া করতো। একবার আমি অসুস্থ। জ্ঞান ছিল না,জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমার শিয়রে অনন্ত মাসি বসা।তার চোখে জল। জলের ফোটা মুখ গড়িয়ে আমার হাতে। আমার রক্তের বন্ধনে আত্মীয়দের চোখের জল আর এ মাসির চোখের জলের কোন ভিন্নতা পাই নি। এ যে আত্মা -মনের গহীনতা আর সম্প্রীতি থেকে নিঃসৃত বৈষম্যহীন মানুষের ভালবাসার চোখের জল। এ জলের প্রাপ্তির সুখও ভিন্ন। সম্প্রীতির আভিধানিক অর্থ সদ্ভাব,সন্তোষ, আনন্দ, আর এতেই অনাবিল সুখ পাওয়া যায় শুধু জীবনে নয় মরণের পরও। আমাদের এ পাড়ার ছেলে সংগ্রাম। প্রয়াত হয়েছে গত মাসে।বয়সে আমার ছোট কিন্তু সদ্ভাব ছিল সমমনা। পথে দেখা হলেই আন্তরিকতা। মসজিদ রোডে আমার অফিসে আসা যাওয়ায় প্রতিদিন দেখা হতো। মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিতো চোখে চোখ পড়লেই। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি।মরদেহ দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। শেষ যাত্রায় শশ্মানে গিয়ে দেখি তার বন্ধুদের ভীর, অধিকাংশই মুসলিম,খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বী বেশ কজন,তার আত্মীয় ও ধর্মের লোকদের সাথে সবাই শোকে মুহ্যমান। শেষ যাত্রায় সকলের চোখেই সম্প্রীতির জল। এ হচ্ছে ক্ষণ -জন্মা মানুষ সংগ্রামের সম্প্রীতিভরা জীবনাচারের অনন্য প্রাপ্তি। মানুষ হয়ে মানুষকে ভালবাসার পুরস্কার। শোকের মাঝেও সুখ অনুভব করেছি এই প্রাপ্তি দেখে। শারদ সময়ে এমনই সময়ে তাই আহবান, আসুন মানুষে মানুষে ভালবাসায় সম্প্রীতিতে জীবন কাটাই। শেষ সময়ে সংগ্রামের মতো পুরস্কারের আশায়।
লেখক: সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব,সম্পাদক নতুন মাত্রা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
« Aug    
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »