নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      রবিবার ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের টাটা মোম্বাই হাসপাতালে প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসায় রোগীদের হয়রান-পেরেশানি নেই

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ণ , ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে

রিয়াজউদ্দিন জামি, মোম্বাই থেকে : এশিয়া মহাদেশের অন্যতম ক্যান্সার বিশেষায়িত ভারতের মোম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশসহ বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে হাজারো ক্যান্সার আক্রান্তরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। নিত্যদিনে রোগীদের ঠাসা ভীড়ে মোম্বাইয়ের এই টাটা মোমোরিয়াল হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অন্য রকম পরিবেশ পরিস্থিতি। এখানে বিপুল সংখ্যক রোগীর আনাগোনা থাকলেও সবকিছুই চলে নিয়ম মাফিক। কোথাও কোন অনিয়ম নেই, সবকিছুই চলে সুশৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে। সে সাথে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আস্থার একটি জায়গা করে নিয়েছে। এখানে চিকিৎসক দেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা, রেডিয়েশন, কেমো থেরাপীসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যদিয়ে। তবে চিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না তাদেরকে আলাদা বাসা, হোটেল, অথবা কোটেজ ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। সেখানে কোন হোটেলে প্রতিদিন ৫ হাজার রুপি পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু কটেজগুলোতে কোনটি ২/৩ হাজার অথবা ১৫শ টাকায় থাকতে হয়। মোম্বাই টাটা হাসপাতালে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রোগী আসে। তাদের বেশীর ভাগ লোকেরাই মোম্বাই আজম মিস্ত্রী এলাকাসহ আশ পাশ এলাকায় অবস্থান করে। এমনকি অনেককে সাশ্রয়ে থাকার জায়গা পেতে ৪০/৫০ কিঃমি পথ পাড়ি দিয়েও রোগী ও স্বজনদের থাকতে হচ্ছে। তবে টাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য সরকার ইলেকট্রনিক ট্রেনে ফ্রি করে দিয়েছেন। রোগী ও তার স্বজন করোর জন্য টিকিটের অর্থ দিতে হয় না। শুধু তাই নয় সকল যাত্রীই সুশৃঙ্খলভাবে চলে। ট্রেনে চলাচলের ক্ষেত্রে নেই কোন অনিয়ম বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রবণতা। প্রথম শ্রেনীর কামড়ায় সিট খালি পড়ে থাকলেও সেখানে কোন যাত্রী গিয়ে বসে যায় না। দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেনীর যাত্রীরা টিকেটে নির্ধারিত কামরায় থেকেই যাতায়াত করে থাকেন। সে সাথে নারী ও বয়স্কদের জন্য রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা। তাদের ট্রেন ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত। কয়েক মিনিট পর পর আসে কারেন্ট চালিত ট্রেন। সব কিছুতেই থাকে সুশৃঙ্খলতা।

দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানকারীরা জানান, আধুনিক এই হাসপাতালটিতে যে সমস্যাটি হয় সেটি হচ্ছে দ্রুত চিকিসা পাওয়া। তবে সেটিরও একটি কারণ রয়েছে। কারণ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা যেখান থেকে শুরু করেন সেখানকার চিকিৎসকগণ রোগীর ব্যবস্থাপত্র প্রস্তুত করে তার কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি বলে দেন না। সে সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, ডকুমেন্ট, পরীক্ষার সিডিসহ নানা তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত করা হয় না। রোগীরা যখন টাটা হাসপাতাল আসেন তখন চিকিৎসকগন সকল কাগজ পত্র, নথি তলব করেন। তখন যথা সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, সিডি পেতে সময় ব্যয় হলে চিকিৎসার কাজও পিছিয়ে পড়ে। যদি তারা ঠিক মত কাগজ পত্র পান তাহলে চিকিসকগন তাদের রিপোর্ট দ্রুত এনালাইসিস করে চিকিৎসা কার্য্ক্রম শুরু করে দিতে পারেন। অন্যথায় দিনের পর দিন চলে যায়। প্রলম্বিত হয় চিকিসা সেবা। কারন তখন এখানকার চিকিসকগন নতুন করে তাদের পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা সেবা দেন। তাই সকল রোগীকেই মোম্বাই আসার আগে তারা প্রথমে যেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্র এবং চিকিৎসার পদ্ধতি বিষয়ে একটি নির্দেশিকা নিয়ে আসলে ভাল হয়।
এখানকার দায়িত্ব প্রাপ্তরা জানান, এখানে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রসহ চিকিৎসার আপডেট নথিপত্রে ত্রুটিজণিত কারণে মূলত রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা শুরু করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন কেমো থেরাপি দিতে ২৪ ঘন্টাই কেমো সেন্টার খোলা থাকে। শুধু কেমার জন্যই ৫০টি সিট রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৪/৫শ রােগীর কেমো দেওয়া হয় এখানে। তবে টাটা হাসপাতালের চিকিসা ব্যবস্থাপনা পুরোটাই অনলাইন নির্ভর। রোগীর প্রাথমিক কাজ রেজিষ্ট্রেশন করা। এরপর ডাক্তার দেখানো তাও অনলাইন, ডাক্তার সিরিয়াল অনলাইন, ঔষধ ক্রয় অনলাইন, টাকা জমা থেকে শুরু করে সবই অনলাইন। এখানে এমন কোন কাজ নেই যা অনলাইনে হয় না। নগদ টাকা তো চেখে দেখা মেলেনি। এখানে চুক্তির বিনিময়ে চিকিসা সহায়তার রেওয়াজ আছে। ভাষাগত সমস্যা সহ ভিবিন্ন প্রতিকূলতার জন্য তাদের কিছু সম্মানি দিতে হয়। এতে তারা ভাষাগত সমস্যায় সহায়তা প্রদান করে থাকে। তাতেও কোন জোর জবরদস্তি নেই।
হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্তরা জানান, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা অনলাইন নির্ভর হওয়ার কারনে রোগীরা হয়রানীর শিকার হন না। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এখানে জুনিয়র ডাক্তারগন সিনিয়রের আদেশ ছাড়া ফাইলই ধরেন না। দেন না কোন মতামত। চিকিসকগন এখানে সম্মিলিত ভাবে কাজ করেন। যেকোন সিদ্ধান্তের প্রাক্কালে সকল চিকিৎসকগণ মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে সকল চিকিৎসকগণ ঐক্যমতে এসে তারপর সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। ল্যাভরেটরীতে পরীক্ষার কয়েক মিনিটের মধ্যই চিকিসক এর কাছে অনলাইনে রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়। এই রিপোর্ট নিয়ে তাৎক্ষনিক চিকিসকগন বিচার বিশ্লেষণ করেন। সে অনুযায়ী যার যার প্রয়োজন মত চিকিসা সেবা দ্রুত করা হয়।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »