নিখোঁজের ৯দিন পরে কসবার যুবকের লাশ ঢাকায় সনাক্ত
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ , ২৩ মে ২০২১, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগেপ্রতিবেদক:নিখোঁজের ৯দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় মিলেছে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ।নিহত যুবকের নাম মো. হাফিজুর রহমান মাসুদ (৩০)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের (মৌলভীপাড়া) মো. মুজিবুর রহমান ও শামসুন্নাহার দম্পতির সন্তান। হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা শোকে মুহ্যমান।
লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিক অবস্থায় পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় অজ্ঞাত পরিচয়ে তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়।নিহতের গলায় ধারালো অস্ত্রের ক্ষত, ডান হাত ও পায়ে একাধিক জখম রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মর্গ কর্তৃপক্ষ।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক রইচ উদ্দিন তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৫ মে রাতেই একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছিলাম। আজ জানতে পেরেছি এটি হাফিজের মরদেহ। তবে এটি হত্যা না-কি আত্মহত্যা এ বিষয়ে পুলিশ কিছুই নিশ্চিত করে নি।
মৃত্যুর বিষয়কে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ও হাফিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেফতাহুল ইসলাম পান্থর দুটো ফেসবুক স্ট্যাটাস যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যার প্রথমটিতে তিনি লিখেন, “হাফিজ আর নেই। কিছুক্ষণ আগে মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। যারা মরদেহ নিয়ে এসেছিল তারা বলছে, শহীদ মিনারের সামনে ডাব বিক্রেতার দা নিয়ে নিজের গলায় আঘাত করে টিএসসির দিকে দৌড় দেয় হাফিজ। কিছুদূর গিয়ে পড়ে যায় সে।
পান্থ আরো লিখেছেন, সেখানকার লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন এবং ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মরদেহটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে রাখা হয়। সঙ্গত কারণেই মরদেহের ছবি শেয়ার করছি না। প্রক্টর স্যার ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছেন মরদেহ আনার জন্য। তার পরিবারকে জানানো হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আশা করছি।
পরবর্তীতে তার অন্য একটি স্ট্যাটাসে আত্মহত্যা নাকি খুন, মাদক সংক্রান্ত ইঙ্গিতবহ কিছু ঘটনার কথা সামনে এসেছে। তার (পান্থ) স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো,
“নিজেকে নিজেই স্ট্যাব করে তাও আবার গলায় আত্মহত্যা করাটা পৃথিবীতেই দুর্লভ। এভাবে আত্মহত্যা করতে হলে আপনি একটাই সুযোগ পাবেন নিজেকে স্ট্যাব করার। যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে সেও শেষ মুহুর্তে বাচার চেষ্টা করে। বন্ধু হাফিজের এভাবে ‘কথিত’ আত্মহত্যা আসলেই আত্মহত্যা কি না সেটা যথেষ্ট সন্দেহের বিষয়। পাশাপাশি মাদক সংক্রান্ত কিছু তথ্য (সন্দেহের অবকাশ থাকায় বিস্তারিত বলছি না) বাতাসে উড়ে বেরাচ্ছে যেখান থেকে সহজেই অনুমেয় যে এটা আত্মহত্যার চেয়ে খুন হবার সম্ভাবনাই বেশি। তার পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা দ্রুততম সময়ে তদন্ত চাই। আত্মহত্যা হলে যথেষ্ট সন্তোষজনক প্রমাণ দিন। খুন হলে সেটার বিচার করতে হবে। আমাদের বন্ধু হাফিজের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। ২০১৫-১৬ ব্যাচ এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে।”
পারিবারিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাফিজ গত ১৫ মে গ্রামের বাড়ি কসবা থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ক্যাম্পাসে পৌঁছে বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাস এলাকায় আড্ডা দেন। সেদিনই সর্বশেষ তাকে কার্জন হলের সামনে বসে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায়। কিন্তু এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তার বন্ধুদের ভাষ্যমতে, নিখোঁজের দিন রাত আনুমানিক ৮টা বা ৯টার দিকে তিনি বাড়ি চলে আসতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। নিখোঁজের ঘটনায় কসবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং ১২৮৩) করেছিলেন তার মা শামসুন্নাহার বেগম। শাহবাগ থানা পুলিশকেও তার নিখোঁজ হবার কথা জানানো হয় বলেও জানায় তারা।
মূকাভিনয় শিল্পী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিতি পাওয়া হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্কুল জীবনেই মুকাভিনয়ের চর্চা করতে থাকা কাজের জন্য পেয়েছেন অঢেল পুরস্কার ও সম্মাননা। এদিকে ঘটনার জেরে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন