ঈদ কার্ডের গল্পের যুগে আমরা
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ , ২১ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
হাবিবুল হক রাজ্জি: বিভিন্ন আকৃতির রঙের ও ডিজাইনের কাগজের ভাঁজে গুটিকয়েক চরণসংবলিত কার্ড ঈদের দাওয়াত কার্ড বা ঈদ কার্ড নামে পরিচিত।
“সাদা গোলাপ সবুজ পাতা,
তোমাকে জানাই ঈদের কথা।
আসবে আমার বাড়ীতে বসতে দিব পিড়িতে।
খাবে কিন্তু অল্প করবো অনেক গল্প”
ঈদ আসলেই এমন ছন্দে ছন্দে নাকি সকলের হাতে সরব থাকতো বাহারি রঙ্গের ঈদ কার্ড। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন কে কার আগে পৌঁছাবে ঈদ কার্ড চলতো সেই প্রতিযোগীতা। ঈদ কার্ড আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার নাম। একটা সময় ঈদ এলেই যেন ঈদ কার্ড কেনার হিড়িক পড়ে যেত। কোথায় ঈদ কার্ড বিক্রি হয়, সেখানে ভিড় জমত বেশ। পাড়ায় কিংবা মোড়ে দোকানিরা ব্যস্ত সময় পার করতো ঈদ কার্ডের চাহিদার যোগান দিতে। সবারই চিন্তা ধারা থাকতো কোথায় পাওয়া যাবে মনের মতো ঈদ কার্ড,যেমটা থাকে ঈদের নতুন পোশাক কেনায়। ০৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় মিলতো ভিন্ন মানের ঈদ কার্ড। এর থেকেও দামী গুলো মিলতো শহুরে বড় দোকানে।
আবার অনেকে কাগজের শৈল্পিক ব্যাবহারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন নানান ছন্দ-কথা যা দিয়ে জানান দিতো ঈদ আসছে নব আবেশে, নিজ হাতে আকাঁ কার্ডের শৈল্পিক ছোঁয়ার আভিজাত্যের ছাপ থাকায় তাতে নিহিত থাকতো বারতি আবেগ।
ঈদ কার্ড দেওয়া-নেওয়ায় ত্রুটি ঘটলে হয়ে যেত বিপত্তি কত-রাগ অভিমান। ঈদটাই যেন ফ্যাকাশে। ঈদের আগমনের সঙ্গে যুগপৎ সংযোগ ছিলো ঈদ কার্ডের। সকলের আবেগের। একেকটা ঈদ কার্ড যেন ভালোবাসার ছোঁয়া।
গল্পের মতো মনে হলেও যুগের প্রত্যাবর্তনে, এতো আবেগের ঈদ কার্ড নিয়ে এখন নেই মাতামাতি। ঈদ কার্ডের দোকান পাওয়াটাও বেশ দুষ্কর। সচারাচর দেখা মিলে না এইসব দোকানের। যেন স্মৃতি হয়ে গেছে আবেগ-অনুভূতির ঈদ কার্ড। কালক্রমে মোবাইল, ইন্টারনেটের ডিজিটালাইজেশনের যুগে আগের মতো ঈদ কার্ড বিনিময় সেভাবে হয় না। জায়গাটি দখল করে নিয়েছে (ইমেইল),হোয়াটসঅ্যাপ,মেসেঞ্জার,ইন্সটাগ্রাম,মোবাইল এসএমএস, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। যার মাঝে সব থেকে এগিয়ে ফেইসবুক। এই আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঈদকার্ডের মতো সেই আন্তরিকতা ও ভালোবাসার স্পর্শ নেই। যান্ত্রিকতার শহরে গ্রামবাংলার আবহমান এই সংস্কৃতি লোপ পেয়েছে।
আধুনিকায়নের এই যুগে খুব সহজেই অনলাইনে মিলছে ঈদ শুভেচ্ছা পোস্টার,ব্যানার কিংবা দাওয়াত কার্ড। তাই ঈদ কার্ডের প্রচলন এখন সকলের কাছে সময় অপচয়ের মতো। এখনও অনেকে সখের বর্ষে অনলাইন কিংবা দুষ্কর বিভিন্ন মাধ্যমে ঈদ কার্ড সংগ্রহ করে থাকে কিন্তু তার প্রচলন একদম কম। আধুনিকায়নের সহজলভ্যতায় অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে আবেগ। তাই এই যুগে ঈদ কার্ডের আদি কথা আমাদের কাছে গল্পের ন্যায়। একদিন হয়তবা ইতিহাসে ঠাঁই নিবে শিশুতোষদের প্রশ্নের জবাব হয়ে একসময় ঈদে “ঈদ কার্ড” বিতরণের প্রচলন ছিলো।
আপনার মন্তব্য লিখুন