নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছোট পর্দার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ , ২১ জুলাই ২০১৯, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

দেশে তখন একমাত্র টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। নাটক শুরুর সময় দেখা যেত রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। লোকজন সব ভিড় জমিয়েছেন টিভি সেটের সামনে। যাদের বাড়িতে টিভি নেই, তারা ভিড় জমাতেন পাশের বাড়িতে। এমন দৃশ্য দেখা যেত আশির দশকের শেষের দিকে। তখন বিটিভিতে প্রচার হতো হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’। আর এই নাটকের নেপথ্যের মূল কারিগর ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। নব্বই দশকে টিভি নাটকের গতিধারা পাল্টে দেয়া এক ম্যাজিক হিরো হুমায়ূন। ‘কোথা কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’ নাটকগুলো এখনো দর্শকের হৃদয়ে জায়গা দখল করে আছে। গতকাল শুক্রবার ছিল হুমায়ুন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। হুমায়ূন ভক্তরা নানা আয়োজনে দিনটি পালন করেছে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে রুটিন শারীরিক পরীক্ষা করতে গিয়ে আকস্মিকভাবেই ধরা পড়ে হুমায়ূন আহমেদের কোলনে (বৃহদান্ত্রে) ক্যান্সার, তাও চতুর্থ পর্যায়ে। এরপর প্রায় দশ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সবার হৃদয়ে সমানতালে বহমান হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূনের ‘এই সব দিনরাত্রী’ নাটকের শফিক চরিত্রে বুলবুল আহমেদ, রফিক চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূর আর নীলু ভাবী চরিত্রে ডলি জহুর অভিনয় করে ভীষণ জনপ্রিয়তা পান। ছোট্ট টুনির মৃত্যুর মাধ্যমে ধারাবাহিকটি শেষ করেন হুমায়ূন। পরদিনই প্রেসক্লাবের সামনে টানানো হলো ব্যানার ‘টুনির কেন মৃত্যু হলো, হুমায়ূন আহমেদ জবাব চাই’। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের চরিত্রের জন্য রাজপথে মিছিল করার মতো ঘটনা তো একাধিকবার দেখা গেছে। ‘বাকের ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ স্লোগানের মিছিলটি কোনো রাজনৈতিক দলের ছিল না। হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’র প্রধান চরিত্র বাকের ভাইকে ফাঁসি না দেয়ার দাবি জানিয়ে এই স্বতঃস্ফ‚র্ত মিছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে হুমায়ূন আহমেদ লিখেন ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’। একটি টিভি নাটক নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে, তার দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন হূমায়ূন আহমেদ। বাকের ভাই চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূর এখনো মানুষের মুখে মুখে বিচরণ করছেন। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটি প্রচারের প্রায় দুই দশক পর আসাদুজ্জামান নূর যখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, তখন বাকের ভাইয়ের নাম ধরেই নীলফামারীতে ভোট চাওয়া হয়েছে। আসাদুজ্জামান নূর পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী হন এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। এখনো তিনি কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তাকে বাকের ভাই বলেই ডাকা হয়। কোনো নাটকের চরিত্র যে কতটা জনপ্রিয় হতে পারে সেটা হুমায়ূন আহমেদ দেখিয়েছেন।
ধারাবাহিকের পাশাপাশি একদিন হঠাৎ, খাদক, অন্যভুবন, অচিনবৃক্ষ, খোয়াব নগর, জোছনার ফুল, আজিজ সাহেবের পাপ, আমরা তিনজন, ভ‚ত বিলাস, বুয়া বিলাস, এই বৈশাখে, চৈত্রদিনের গান, নাট্যকার হামিদ সাহেবের একদিন, পক্ষীরাজ, জুতা বাবা, তারা তিনজন-টি মাস্টার, তৃষ্ণা, রূপালী রাত্রি, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, বাদল দিনের প্রথম কদমফুল, ঘটনা সামান্য, চেরাগের দৈত্য, বৃক্ষমানব, এই বসন্তেসহ অসংখ্য খণ্ড নাটক তৈরি করেছেন তিনি। টিভি চ্যানেলের ঈদ আয়োজন কিংবা দৈনিক পত্রিকার ঈদ সংখ্যা যেন তাকে ছাড়া চলতই না। চাঁদ রাতে সপরিবারে হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখতে বসা যেন প্রতি বছরের ঈদের নির্মল আনন্দের নিত্য ঘটনা। প্রতি ঈদেই দেশের শীর্ষ টিভি চ্যানেলগুলো তাদের প্রাইম টাইম ঠিক করে রাখে হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত নাটক প্রচারের জন্য। সব মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদের নাটক যেন নির্মল বিনোদন। এখনো অনলাইন প্লাটফর্ম ইউটিউবে হুমায়ূন আহমেদের নাটক খুঁজে খুঁজে দেখেন অনেকে। ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘জুতা বাবা’ নাটকগুলো ভীষণ জনপ্রিয় ইউটিউবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »