তবুও বেকার যুবকেরা একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখে—- আশরাফ পিকো
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ , ১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগেবাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। মাত্র সাত বছরে এই হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল পাকিস্তান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত কয়েক বছর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বেকার ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার; যা আগের বছরের চেয়ে ৮৭ হাজার বেশি। ওই সময় কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সাড়ে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী বেকার ছিলেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বেকার ছিলেন ৬ লাখ ৩৮ হাজার। আর দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ।
আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেড় যুগ আগে ২০০০ সালে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের হিসাবে এই হার একই থাকে (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)। বাংলাদেশে পুরুষের ক্ষেত্রে বেকারত্ব ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।২০২০ সালের অবস্থা আরও করুন,
বাংলাদেশে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন পর্যায়ে বেকারত্বের হার কত, তাও তুলে ধরা হয়েছিল প্রতিবেদনে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পার হয়নি এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম (১ দশমিক ৮ শতাংশ)। প্রাথমিক পর্যায় শেষ করা মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যাঁরা মাধ্যমিক পর্যায় পযন্ত শিক্ষিত, তাঁদের মধ্যে বেকার সাড়ে ৮ শতাংশ। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালে ভীড় জমায় একদল তরুন। তাদের লক্ষ্য ঢাকা; কারন এদেশে ঝাড়–দার নিয়োগ করলেও তার নিয়োগ পরীক্ষা হয় ঢাকা থেকে। তারা কেউ প্রিলি দেবে; কেউ রিটেন; কেউ ভাইভা। কারো প্রথম, কারো পঞ্চাশতম; কারো বয়স শেষের শেষ পরীক্ষা।।
মা ফোন দেয়- ‘বাবা পাশ করেছিস দুই বছর হল; একটা কিছু কর। তোর বাবার পক্ষে আর সম্ভব না। মা তোর জন্য দোয়া করছি। এবার তোর চাকরি হবেই হবে’
বাবা ফোন দেয়- ‘বাবা আমাদের জন্য না; তোর জন্য একটা চাকরি ঠিক কর; বয়স কত হয়েছে খেয়াল আছে তোর।’
কথা দেয়া প্রিয়তমার ফোন বাজে – ‘তুমি বিসিএস ক্যাডার হও; ব্যাংকার হও এইটা আমি চাই না; একটা ছোটখাট চাকরি জোগাড় করো প্লিজ। বড় জব পরে দেখা যাবে।’
শুধুমাত্র একটি চাকুরির জন্য যুবকটি অনার্স ফাস্ট ইয়াার থেকে মুখস্ত করে আসছে – কারেন্ট নিউজ, কারেন্ট ওর্য়াল্ডয়ের সব সংখ্যা; জবের সকল গাইড।পৃথিবীর ২১৫ টি দেশের রাজধানী, মুদ্রা, আয়তন, জনসংখ্যা, রাষ্ট্রনায়কের নাম সবই তার মুখস্থ।যমুনা সেতুর পিলার কয়টা?চর্যাপদের কোন লাইন কে লিখেছেন?কোন জেলায় কি আছে?পৃথিবীর কোন নদী, শহর, প্রনালী, বাঁধ কোথায়? .. …. … সবই তার মুখস্থ।
যুবকটি একটি সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে রাতভর পাড়ি দিয়ে ঢাকা পোঁছায়। সকালে পরীক্ষা। ঢাকায় নেমে হাতমুখ ধুয়ে ২টা পরটা গিলে এক্সাম হলে দৌড় দেয়।পরীক্ষা ভালোই দেয়; হল থেকে বের হওয়ার পরপরই পর্যায়ক্রমে- মা, বাবা,প্রিয়তমা, বন্ধুদের ফোন।বাসে ওঠে যখন শুনে তার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে; মন ভেঙ্গে যায়।বেশিরভাগ যুবকেরাই বার বার ভাইভা দেয়, কিন্তু চাকরি মিলে না।ফিজিক্স থেকে পাস করে চাকরি মিলে হয়ত কৃষি ব্যাংকে; সারাজীবন রসায়ন পড়ে হয়ত ঢুকে পুলিশ বিভাগে; প্রানীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা পড়ে তাকে ঢুকতে হয় মার্কেটিং জবে !!
কেউ পুরো বেকার; কেউ অর্ধেক বেকার; কেউ কোনমতে পড়ে থাকে পেটচালানোর জন্য।স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমাদের যুবকদের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা নেই।রাষ্ট্র ডিজিটাল হয়; জিডিপি বাড়ে; বাজেটের আকার বাড়ে; শতশত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি দেশে ঢুকে; কেবল উন্নয়নের চুক্তি হয়; বৈঠক হয়; ঝাঁকে ঝাঁকে সেমিনার-সিম্পজিয়াম হয় ……কেবল নিয়্গো বিজ্ঞপ্তি বাড়ে না, কর্মসংস্থান বাড়ে না।
বেকারের ভীড় বাড়তে থাকে; ১টি পোস্টের বিপরীতে উপচে পড়ে হাজার হাজার প্রতিযোগী । তারপরও যুবকেরা একটি সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটে; কোন এক শুক্রবারে তার স্বপ্ন পূরণ হবে।মাকে ফোন করে বলবে- ‘মারে আমার চাকরি হয়েছে’বাবাকে বলবে- ‘বাবা তুমি এবার বিশ্রাম নাও; শুধু বাজার করবে; পত্রিকা পড়বে আর টিভি দেখবে’।প্রিয়তমাকে বলবে- ‘আগামী মাসেই তোমার বাবার সামনে আমি দাঁড়াবো; দেখি কে ঠেকায় !!
আপনার মন্তব্য লিখুন