মোবারক এখন গরুতে ! —– এইচ.এম. সিরাজ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ , ১০ আগস্ট ২০১৯, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
‘এ্যাই, দ্যাখ এইডা করিসনা! এইসব করন কইলাম ভালা না।’ সেই ছোট্টকালে, মন্দ জাতীয় কোনোকিছু করতে গেলেই মায়ের মুখে এমনতর অনেক বারনাদেশ শুনতাম। যদিও এসবের সঠিক কোনোই অর্থ কিংবা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মায়ের কাছে এমনকি অন্য কারোর কাছেই পেতাম না। কিন্তু তাতেই-বা কী? খোদার পরেই যখন মায়ের স্থান, তাই মায়ের আদেশ-নিষেধ বলেই অবলীলায় মান্যি করতাম। তাছাড়া, মা-ই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবনে প্রথম শিক্ষা তো মায়ের কাছেই। তাহলে উপায় কি ভূবনে শ্রেষ্ঠতর এই শিক্ষকের অাদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করার!
মক্তব আমার প্রথম শিক্ষালয়। যেটিকে অনেকেই কেবল ধর্মীয় শিক্ষালয়ই বলে থাকেন। তবে আমার কাছে ওটাই জীবনমুখী শিক্ষার অন্যতম পাঠশালা। জ্ঞান অন্বেষণের ক্ষেত্রে অনন্য এক প্রতিষ্ঠান। অামি সেখানেই অনেক শব্দ শুনেছি-শিখেছি। পরবর্তী জীবনে অসংখ্য ডিগ্রী অর্জন করেছি ঠিকই, কিন্তু মক্তবে শেখা সেইসব শব্দের কোনোই ব্যাত্যয় অামি অন্তত পাইনি। এসব সঙ্গত কারণেই আজ অবধি সেইসব শব্দের অপব্যবহার দেখলে-শুনলে কিঞ্চিৎ হলেও বুকটা কেমন যেনো কেপে ওঠে। হৃদয়ে শুরু হয়ে যায় অনেকটাই রক্তক্ষরণের দশা।
আগেকার দিনের মহিলারা নাকি শ্বশুর-ভাসুর-স্বামীর নাম কভু মুখে আনতেন না। অর্থাৎ নিজ মুখে উচ্চারণ করতেন না। তিনাদের নাম জানতেন ঠিকই, কিন্তু নিজের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে বলতেন না। যদ্দূর জেনেছি, এমনটি ভয়ে নয়- সম্মান দেখাতেই তিনারা করতেন। সমাজে এমনও নাকি অনেক মহিলা ছিলেন, যিনারা পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করাকালেও ‘ইয়া আজিজুল হাকিম’ এর স্থলে পড়তেন ‘ইয়া আজিজুল আমরা ঘরের তাইন’। অর্থাৎ ওনার স্বামীর নাম আবদুল হাকিম। তাই ‘হাকিম’ শব্দটির স্থলে ‘অামরা ঘরের তাইন’ বলেই চালিয়ে নিতেন। বাংলা ভাষাতেও এসবের খুব একটা ব্যাত্যয় নেই। স্বামী মানে পতি। অার হিন্দু ধর্মে তো স্বামী হলেন ‘পতিশ্বর’, অারাধ্য দেবতা। এমনি আরো অনেক সঙ্গতির কথাও বলা যাবে।
মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। দেশের খ্যাতনামা ব্যাক্তিত্ব হানিফ সংকেত’র জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ টেলিভিশনে উপভোগ করছিলাম। অনুষ্ঠানটির একটি অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো নানা-নাতির পর্ব। ওই পর্বটিতে নাতি তার ডায়লগে বললেন, ‘ঈদ নানা’। এমনটি বলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাতি বলেন, ‘সকলেই তো ঈদ মোবারক কয়। কিন্তু তুমি হলে অামার নানা, পরমতম গুরুজন। শুধু গুরুজনই বলি কেন? তুমি অামার মায়ের বাপ। অার তোমার নামই তো মোবারক। তোমার মতো পরম গুরুজনের নাম মুখে বলাটাতো রীতিমতোই বেয়াদবি। তোমার নাতি হয়ে কি অামি এমনতর বেয়াদবিটা কররতে পারি? তুমিই বলো!তাই অামি ঈদ মোবারক না বলে ঈদ নানা বললাম।’
আসলে বলতেছিলাম ‘মোবারক’ শব্দের মাহাত্ম্য’র কথা। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আমাদের সকলের প্রিয় নবী- পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর পবিত্রতা বুঝাতে গিয়েই ওনার ব্যবহার্য যেকোনো কিছুর নাম নিলে সাথে ‘মোবারক’ শব্দটিকে সংযোজন করতে হয়। প্রথমবার অামি এমনটি মক্তবেই শিখেছিলাম। সেই থেকে আজ অবধি মনে রেখেছি। শুধু মনে রেখেছিই-বা বলছি কেনো? এযাবৎ মেনেও আসছি। সময় পাল্টেছে, অনেককিছুতেই হয়েছে পরিবর্তন। কিন্তু আজও কি ধর্মীয় এসব আকিদার সামান্যতমও ব্যাত্যয় ঘটেছে? নাকি আদৌ ঘটবে বলে মনে হয়? কেননা, এসব তো শাশ্বত; অপরিবর্তনীয়ই বটে।
রমজানুল মোবারক, ঈদ মোবারক এজাতীয় শব্দাবলী বাংলা ভাষায় হুবহু ব্যবহৃত হয়েই আসছে। এসব শব্দ কি কোনোভাবেই পাল্টানো যায়? ঠিক তেমনিভাবেই এই শব্দগুলোর সাথে কি অন্যকিছুকে মিলানোও যায়? আর এসব করা কি অাদৌ উচিত? তাহলে আমরা এখন কি করছি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে অনেকেই দেখি স্ট্যাটাস দেয় একটি গরুর ছবিতে ‘ঈদ মোবারক’ খচিত! প্রযুক্তির দ্বারা কৃত এই কারুকার্যময় ঈদ মোবারক’র বদলে কেউ তো ‘গরু মোবারক’ও বুঝে নিতেই পারে! তখন কেমনটি হবে! অামরা অাসলে এসব কি করছি? একবারও কি আমাদের ভাবা উচিত নয়? তাহলে এসব করছি কীভাবে?
#
এইচ.এম. সিরাজ : সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আপনার মন্তব্য লিখুন