স্মৃতির দর্পণে ঈদ – নুসরাত জাহান জেরিন
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ , ২৮ জুন ২০২৩, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 months আগে
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ত্যাগের মহিমার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে প্রতিবছরেই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আসে। যথাযত ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হয়।
এই ঈদকে ঘিরে আমাদের নানা স্মৃতি, দিনে দিনে ঈদ আনন্দের সংস্কৃতি কেমন জানি পাল্টে যাচ্ছে। ঈদুল আযহা এলেই শৈশব কৈশোরে আমরা যা দেখেছি সেই সংস্কৃতি কি আগের মতো আছে ? মনে পড়ে শৈশব কৈশোরের স্মৃতি । ঈদ আসলে শহরে অবস্থানরতরা প্রায় সবাই গ্রামে ফিরতেন। গ্রামে ঈদের কুরবানীর পশুর হাটে সকলেই দলবদ্ধ ভাবে যেতেন। ঢোল পিটিয়ে কোরবানির হাটের প্রচার হতো । আমরা দেখেছি দাদা চাচারা সবাই উঠোনে বসে, কোন ধরনের পশু কুরবানী দেবেন ,তা নিয়ে শলা- পরামর্শ করতেন। তারপর গরুর হাটে গিয়ে পশু কিনে বাড়ি ফেরাতে ছিল আনন্দ। পশুর গলার দড়ি থাকত কিশোর যুবাদের হাতে। কত দামে পশু কেনা হলো এই প্রশ্নের জবাব দেয়া হতো খুশী মনে। আনন্দে নেচে দুলে পশু আনা হতো বাড়িতে। তারপর পশুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, সবকিছুতেই ছিলো আনন্দ। ঈদের আগে চাঁদ রাতে শিশু কিশোররা মেহেদী পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। আর ঘরের বউ ঝি, মা-চাচীরা, দাদিরা একসাথে বসে মসল্লার পিষতেন শিল পাটায়। এ আসরে নানা কথা গীত গাওয়া হতো। এ সময়ে কাঁধে ছুড়ি চাকু ধাড়ালো করার যন্ত্র নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতো ফেরী ওয়ালা। অনেকে পাকা দেয়ালে ঘষে চুড়ি চাকু ধাড় দিতেন। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছোট বড়রা পশুর গোসল করাতো পুকুর বা নদীতে। তারপর নতুন জামা গায়ে দিয়ে ঈদগাহর জমায়েত। ছোট ছেলে মেয়েরা ঈদগাহ মাঠের পাশে ভীর করে থাকতো। নামাজ শেষ করে সকলেই বাড়ি ফিরতেন তাড়াতাড়ি। । কখন কার আগে পশু কোরবানি দেয়া যায় তেমন প্রতিযোগিতা ছিল। জবাইয়ের সময় এলকার হুজুর ছুড়ি নিয়ে এসে পশু জবাই করতেন। উঠোনে উটোনে পশু জবাই দেখতে ভীর করেতা সবাই। সাথে থাকতো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে থাকতো জটলা। এ আনন্দ অন্যরকম আবার কেউ কেউ পশু কোরবানি দেখে ভয়ও পেতো। পশু কোরবানি হলেই অনেকেই পশুর তরতাজা রক্তে হাত কিংবা পা ভিজিয়ে নিতো। কোরবানির মাংস কাটায় ছিল ভিন্ন আমেজ। পাটি ছালা খড় বিছিয়ে উঠোনের একপাশে প্রতিটি বাড়িেেতই জমতো মাংস কাটার ধুম। বাড়ির ছোটরাও বাদ যেতো না । মাংস কাটা শেষ হলে দাঁড়ি পাল্লা এনে মাংস মাপ । মাংস করা হতো তিনভাগ। তিন ভাগের এক ভাগ জমা করা হতো কোন এক বাড়িতে, এ মাংস পাড়া পড়শি প্রতিবেশীর জন্য। যাঁরা কোরবানী দিতেন না তাদের নাম লিষ্ট করে বাড়িতে বাড়িতে মাংস পাঠানো হতো। ধনী-গরীব সকলের ঘরে রান্না হতো কোরবানির মাংস। দূরের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বিকেল বেলা মাংস পাঠানোকে কেন্দ্র করে ছিল ব্যতিব্যস্ততা। জীবন জীবিকার তাগিদে প্রিয় গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী প্রায় এখন অনেকেই। তবে গ্রামীণ জনপদের সেই আমেজ শহরে পাওয়া যায় না। যৌথ পরিবারের বদলে একক পরিবার। ফ্লাটে বন্দী জীবন। অন্য যে কোন দিনের মতোই অনেক পরিবার দিন কাটায় ঈদে। আনন্দ বর্ণবিহীন। তবুও ঈদ আসে, ঈদ যায়।
আপনার মন্তব্য লিখুন