আপন ভাই-ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলার ফাঁদ ইটালী প্রবাসীর
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ , ২৩ আগস্ট ২০২০, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
প্রতিনিধি॥ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পারিবারিক বিরোধে এক ইটালি প্রবাসীর বিরুদ্ধে আপন ভাই-ভাতিজা ও ভাবীকে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রবিাবার বিদ্যাকুট গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা। সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের বিশিষ্ট লোকজনও যোগ দেন। তারা মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রবাসী তাজুল ইসলাম বহিরাগতদের বাদী করে নিজের ভাই, ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রামের মানুষ। গত ১৯জুলাই নবীনগর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রবাসী তাজুল ইসলামের একটি জায়গার লিজ গ্রহিতা মোঃ দুলাল মিয়া বাদী হয়ে তাজুলের বড় ভাই আবু শামীমের ৩ছেলে কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন, মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন এবং তাদের মা লুৎফা বেগমকে আসামী করে একটি মামলা দেন। ওই মামলায় গাছ চুরি ও বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ আনা হয়। জেলা সদরের গোকর্ণঘাটের আরশ মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ২০১৯ সালের ২৩ আগষ্ট তাকে মারধোর ও পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক, তার দু’ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন ও মাষ্টার্স অধ্যায়নরত জসিম উদ্দিন, চাচা আবু তাহেরসহ ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এরআগে প্রবাসী তাজুল ইসলাম নিজে গত বছরের ১৭ জুন নবীনগর থানায় তার ভাই আবু তাহের, তাহেরের স্ত্রী আলেয়া বেগম, মেয়ে তানিয়া আক্তারসহ ৪জনের বিরুদ্ধে জায়গা জমি দখল ও হত্যার হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেন।
তবে এসব অভিযোগ উদ্ভট বলে দাবী করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, বিদ্যাকুট ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান, সুর স¤্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, মো: খোরশেদ আলম, মাহবুবুর রহমান, আতিকুর রহমান, কুদ্দুস মোল্লা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, তৃতীয় ব্যাক্তিরা এসব ঘটনায় জড়িত। গাছ কেটে নেয়া বা জায়গা দখলের কথা আমরা শুনিনি। সুর স¤্রাট মহা বিদ্যালয়ের প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ। ইটালী প্রবাসী মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, হয়রানিমূলক এসব মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে। মানিকদের পরিবারের ওপর উল্টো অত্যাচার চলছে। তাদের এখান থেকে গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। এসব করে গ্রামের শান্তিপূর্ন পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, মামলাগুলোর মধ্যে সত্যের কোন লেশ নেই। বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সদস্য জীবন মিয়া বলেন, যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। ডাক্তার গোলাম সারোয়ার বলেন, জায়গা-জমি দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। আবু তাহের বলেন, আমরা স্কুল পরিচালনা কমিটি থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি ২০ বছরের জন্যে। ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল আমাকে দোকান থেকে উচ্ছেদের জন্যে এসব করেছেন। তার কারনে আমি জেল খেটেছি। সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে ২০ বছরের চুক্তিতে তারা স্কুলের জায়গাটি নিয়েছেন। তার ভাই তাজুল ইসলামই তাকে স্কুল থেকে উঠিয়ে দিতে আমাদের চাপ সৃষ্টি করেন। এতে রাজী না হওয়ায় ২০১৯ সালে আরশ মিয়া নামে একজনের কাছে জমি ভাড়া দিয়ে দেন তাজুল ইসলাম। সাবেক ইউপি সদস্য প্রবাসী তাজুল ইসলামের ভাবী লুৎফা বেগম বলেন, আমার ছেলেরা কেউ বাড়িতে থাকেনা। একবছর ধরে দুলাল, নূরুল ইসলাম, তপন ও আরশ আলী এসে আমাদের হুমকী দিচ্ছে। কাষ্টমস কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিক ও তার ভাই সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষক রায়হান উদ্দিন আল আমীন বলেন, তারা কর্মস্থলে নিজেদের কর্মে যখন নিয়োজিত, তখনই তাদের এসব মামলার আসামী করা হয়। বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: এনামুল হক বলেন, এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। তিনি এটি মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। সরজমিনে সাংবাদিকরা জায়গা দখল বা গাছ কাটার কোন প্রমান পাননি। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন