আব্বু, তোমাকে কখনো বলা হয়নি—ভালোবাসি- ডা: জায়মা রহমান
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ , ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 weeks আগে
জন্মের পর থেকেই বুঝতে শিখেছি—আমার জীবনে একজন মানুষ আছেন, যিনি অনেক সময় পর পর বাড়ি আসতেন। সেই মানুষটি আর কেউ নন, তিনি আমার আব্বু। বছরের পর বছর কেটে যেত, তার দেখা মিলতো না। আমরা মা-মেয়ে দূরের একটি দোকানে যেতাম কল দিতে, আব্বুর সঙ্গে কথা বলার জন্য। একদিন ফোনের ভলিউম একটু বেশি ছিল। কথা শেষ করে আমি আর মা অবাক হয়ে বললাম, “আব্বু এত জোরে কথা বললো কেন?” এখনো মনে আছে সেই মুহূর্তগুলোর উষ্ণতা।
আমাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। আব্বু যখন অনেকদিন পর বাড়ি আসতেন, আমাদের—আমার আর ভাইয়ের—মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ, এক উত্তেজনা কাজ করত। তিনি ফল নিয়ে আসতেন আর তখনই আমরা ভালো ভালো ফল খেতে পেতাম। আব্বু বাড়িতে থাকলে সেদিন বিশেষ কিছু রান্না হতো। ঘরের পরিবেশটাই যেন বদলে যেত।
আব্বুর সঙ্গে আমার একটি বিশেষ স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। তার অফিস থেকে একবার কক্সবাজার ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছিল। আমি তো বাসে উঠলেই বমি করি। সেই যাত্রায় পুরো রাত আব্বুর কোলে শুয়ে কক্সবাজার পৌঁছাই। আমরা সমুদ্রসৈকতে ঘুরেছি, স্পিডবোটে মহেশখালী গিয়েছি। সত্যি বলতে কী, আব্বুর সঙ্গে আমি প্রায় সব জায়গায় যেতাম। যেন আমার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ছিল সেই মানুষটি।
আব্বু ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে DHMS শেষ করে এখন প্রায় ১৫ বছর ধরে একজন সফল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। জীবনের নানা টানাপোড়েন সত্ত্বেও আমাদের দুই ভাই-বোনকে ভালোভাবে গড়ে তুলেছেন। অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন—কিন্তু কখনো ক্লান্ত হননি।
আব্বুর মুখে একটা কথা প্রায়ই শুনতাম, “ছেলে-মেয়েরা যখন যা চায়, সবসময় সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিলে তারা বিগড়ে যায়।” হয়তো কথাটা যুক্তিসম্মত, কিন্তু অনেক সময় এমন কিছু দরকার পড়ে, যা তখন না পেলে পরে পেলেও আর সেই অনুভূতিটা থাকে না।
আমরা দুই ভাই-বোন আব্বুর সঙ্গে মাঝে মাঝে রাগ করি, কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু তেমন দ্রুতই আমরা আবার একসঙ্গে হই, এক টেবিলে খাই, একসাথে হাসি। আব্বু আমাদের বন্ধু, অভিভাবক, আশ্রয়—সবকিছুই।
আজ এই লেখার মাধ্যমে বলতে চাই, সেই কথাটা যেটা কখনো বলা হয়নি মুখে—“আমরা তোমাকে খুব ভালোবাসি, আব্বু।”
তোমার পরিশ্রম, ভালোবাসা, ত্যাগের কাছে আমরা চিরঋণী।
|
আপনার মন্তব্য লিখুন