ঘুষ না পাওয়ায় অদ্ভুত চার্জশীট:মৃত্যুর আড়াই মাস পর জীবিত আবদুর রউফ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ , ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
সংবাদদাতা ॥২০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়ে না পেয়ে মৃত ব্যাক্তি, দেশের বাইরে থাকা লোককে স্বাক্ষী করে একটি হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশীট দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেষ্টিগেশনের ইন্সপেক্টর মো: হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে। আরো ২৪ জন স্বাক্ষী আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন তারা কোন স্বাক্ষ্য না দিলেও তাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন তদন্তকারী ওই কর্মকর্তা।
রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন আল আমিন হত্যা মামলার আসামী নবীনগরের বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ভূইয়া। তিনি জানান, ডিআইজিসহ সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনকে দেয়ার কথা বলে তার কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই টাকা দাবী করেন। এছাড়াও দু’বার ঘুষ বাবদ পিবিআই’র ওই কর্মকর্তাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা মোট ৩৯ জনের জবানবন্দী গ্রহন করেন এরমধ্যে বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফ (৭৩) অন্যতম। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর আবদুর রউফ ইন্তেকাল করলেও স্বাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দী নেয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারী। অর্থাৎ তার মৃত্যুর ২ মাস ২৯ দিন পর তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। আরেকজন মেরাকুটা গ্রামের অজন্ত কুমার ভদ্র (৬৬) এর স্বাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারী। কিন্তু তিনি বৈধ পাসপোর্টে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারী ভারত যান। সেখান থেকে দেশে ফেরেন ৮ ফেব্রুয়ারী। আরো ২৪ জন স্বাক্ষী আদালতে এফিডেভিট জমা দিয়েছেন এই বলে যে, তারা পিবিআই’র ওই কর্মকর্তার কাছে কোন রকম স্বাক্ষীই দেননি। নবীনগরের শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে আল আমিন (২২) খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা কসবার খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাদী হয়ে নবীনগর থানায় ১০ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২/৩ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পাশ্ববর্তী সেমন্তঘর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূইয়া, তার ছেলে পলাশ (ইফতেখার মাহমুদ) সহ মোট ৫জনকে আসামী করা হয়। হত্যা মামলাটির সর্বশেষ তদন্ত করে পিবিআই। এর আগে প্রথমে সিআইডি এবং এরপর গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এই দুটি সংস্থার তদন্তেই প্রকাশ পায় আবদুল হান্নান ভূইয়ার সাথে আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির হোসেনের জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ রয়েছে। আবদুল হান্নানকে শায়েস্তা করতে নিজের শ্যালককে হত্যা করে জাকির হোসেন। এরপর আবদুল হান্নান, তার ছেলেসহ ১০জনকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। দুটি সংস্থার অভিযোগপত্রে বলা হয় ঘটনার আগের দিন ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী নিহতের স্ত্রী ইতির নানীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির ও তার সহযোগী শাওন, বিল্লাল ও মোবারক। খাওয়ার পর জাকির ইতিকে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত খাবার দিয়ে আল আমিনকে নিয়ে পাশের বাড়িতে নাছির ফকিরের মাহফিলে চলে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা করে। এরপর লাশ গ্রামের একজনের বাড়িতে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। দীর্ঘ তদন্ত, স্বাক্ষ্য-প্রমান এবং স্বাক্ষীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর প্রেক্ষিতে সিআইডি এবং গোয়েন্দা পুলিশ জাকির হোসেন (৩৮), তার সহযোগী বিল্লাল (৩৭), শাওন ওরফে রানা (৪২), মোবারক মিয়া (৩৬) এঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগপত্র দেয়। অন্যদিকে পিবিআই এ ৪ জনকে নির্দোষ বলে তাদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে। এমনকি সিআইডি’র প্রথম দিকের তদন্তে ঘটনায় জড়িত বলে যে ৬ জনের নাম প্রকাশ পায় তাদেরকে স্বাক্ষী বানিয়ে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। সাংবাদিক সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন আবদুল হান্নান ভূইয়া।
আপনার মন্তব্য লিখুন