ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণশুনানিতে দুর্ভোগের কথা
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগেঅতিরিক্ত পুলিশ সুপার বললেন ‘আমি নিজেই টিকিট কালোবাজারির শিকার’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৃহস্পতিবার হওয়া এক গণশুনানিতে উঠে এসেছে গণদুর্ভোগের শতকথা।কেউ অভিযোগ আনলেন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির। কেউবা হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরলেন।ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দালাল ধরার বাধ্যবাধকতার অভিযোগও উঠে আসে। পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র নিয়ে হয়রানি, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে হয়রানির অভিযোগও করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মো. শাহীন তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার ১৪ মাসের চাকরি জীবনে একদিন মাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাই। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরতে পুলিশের গাড়ি থেকে নামার পরই পরই দু’-তিনজন এসে জানতে চায় টিকিট লাগবে কিনা। ঢাকা থেকে ফিরে ডিবি পুলিশকে দিয়ে অভিযান চালিয়ে তিনজন টিকিট কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করাই। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এ স্টেশনে বুকিং সহকারী বদলি হয়ে আসতে ১৬ লাখ টাকা লেগেছে।’ ভেরিফিকেশন নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা এক অভিযোগ বিষয়ে তিনি লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন।
গণশুনানিতে এমন আরো অনেক অভিযোগ করেন উপস্থিত সুধীজনেরা। সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এ গণশুনানির আয়োজন করে। ডিস্ট্রিক পলিসি ফোরামের সহযোগিতায় গণশুনানিতে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের ব্যাখা দেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন। একাধিক সরকারি কর্মকর্তা নিজেরাও যে কখনো কখনো দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সেই চিত্র তুলে ধরেন।
ডিস্ট্রিক পলিসি ফোরামের মো. আরজু এ গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন। বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিকে অভিযান হলেও সদর হাসপাতালে হয় না। হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা অব্যবস্থাপনা বিরাজমান। চিকিৎসকরা অফিস সময়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন।’
ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ আনেন সাংবাদিক আ ফ ম কাউছার এমরান ও সাংবাদিক মো. শাহাদাৎ হোসেন। দলিল করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ আনেন শাহাদাৎ হোসেন। সাংবাদিক আল-আমীন শাহীন তার বক্তব্যে কর্তা ব্যক্তিরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালান কি-না এ প্রশ্ন তোলেন।
খায়রুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রয়োজন না থাকলেও ভেরিফাইড এনআইডি কপি চাওয়া হয় পাসপোর্ট অফিসে। না দেওয়া আবেদন জমা রাখা হয়নি। পুলিশ ভেরিফিরেকশন বাড়িতে এসে করার কথা থাকলেও তাকে ডেকে অন্য কোথাও এনে টাকা চাওয়া হয়।’
সাংবাদিক আবুল হাসনাত রাফি অভিযোগ করেন, বিআরটিএ থেকে লাইসেন্সে পেতে হলে দালাল ছাড়া উপায় থাকে না। মোস্তাকিন ও আসাদ নামে দুজন নিজেদেরকে ওই অফিসের কর্মচারি পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।
হাসিনা আক্তার, মাহবুব খান বাবুল, সোহেল রানা তাদের বক্তব্যে টিকিট সংকট ও কালোবাজারি নিয়ে অভিযোগ আনেন। কাউন্টারে মুহূর্তেই কিভাবে আন্তঃনগর ট্রেনের কয়েকশ টিকিট কীভাবে শেষ হয়ে যায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকও ট্রেনের টিকিট নিয়ে অভিযোগ তোলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েও যেহেতু টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়নি, সেহেতু বুঝতে হবে সমস্যাটা প্রকট।’ প্রত্যেক অফিসের কর্মকর্তাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক দায়িত্ব পালনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
গণশুনানিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিটন সরকার। গণশুনানিতে উত্থাপিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে তিনি তার বক্তব্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে কম আসন বরাদ্দ হওয়ায় টিকিট কালোবাজারিরা সুযোগ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে হবে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেওয়া ডা. মাহমুদুল হাসান জেলা সদর হাসপাতালে লোকবল সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোক্তার হোসেন এনআইডি কেন চাওয়া হয় এর ব্যাখা দেন। বিআরটিএ’র কর্মকর্তা জানান, তার কার্যালয়ে মোস্তাকিন ও আসাদ নামে কেউ নেই। অভিযোগ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। জেলা রেজিস্ট্রার তার বক্তব্যে দলিল করতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবো এমন অবস্থানে আমরা পৌঁছতে পারিনি। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঁচ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত একই স্থানে চাকরি করছেন এমন ৫৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে বদলি করা হয়েছে। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি বাস্তব সত্য। আইনশৃঙ্খলা সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই এটা ভালো ফলাফল আশা করতে পারি।’
“কালের কণ্ঠ
বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া”
আপনার মন্তব্য লিখুন