যাত্রী-চালকের অভিনয় করে ছিনতাই, ছিনতাইকারী চক্র আটক
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ , ৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রী ও চালকের অভিনয় করে ছিনতাইয়ের পর পালানোর সময় আন্তঃজেলা ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সুহিলপুর থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার।আটকরা হলেন, সরাইল থানাধীন নোয়াগাঁও এলাকার মৃত হোসেন মিয়ার ছেলে সুজন। এরমধ্যে আটক আরও দুই ছিনতাইকারী মোঃ আতাহার আলী ও ইশারত মন্ডলের নাম জানা গেলেও পরিচয় জানা যায়নি।বৃহস্পতিবার রাতে সরাইলের শাহবাজপুরের আজিজুর রহমান এর ছেলে নাদিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হতে ব্যক্তিগত কাজ শেষে সিএনজি যোগে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ছিনতাইকারী দলের সদস্য সুজন একটি প্রাইভেটকার নিয়ে এসে নাদিমের সামনে থেমে সিলেটে যাওয়ার যাত্রী আছে কিনা ডাকতে থাকে। এ সময় ছিনতাইকারী চক্রের অপর দুইজন সদস্য মোঃ আতাহার আলী ও ইশারত মন্ডল যাত্রী বেশে প্রাইভেটকারে যেতে চাইলে ড্রাইভার সুজন সিলেট যেতে ২০০ টাকা ভাড়া লাগবে বলে জানায়। ওই দুইজন ড্রাইভারের সাথে দর কষাকষি করে ১৫০/- টাকায় সিলেট যেতে রাজি হওয়ার অভিনয় করে। ড্রাইভারের পাশের সিটে স্বপন নামে অপর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য বসা থাকে। এ সময় নাদিম শাহবাজপুর নামলে কত টাকা ভাড়া লাগবে জানতে চাইলে প্রথমে তারা রাজি না হওয়ার অভিনয় করে জানায় যে, তারা সিলেটগামী যাত্রী খুঁজছে। একপর্যায়ে নাদিম ৫০/- টাকা ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব দিলে তারা রাজি হয়ে নাদিমকে প্রাইভেটকারে তুলে যাত্রা করে।প্রাইভেটকারটি বাড়িউড়া পৌঁছার পর কারের পিছনের সিটে বসা ইশারত মন্ডল, নাদিমকে তার কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে বলে। নামিদ প্রথমে তাদের কথামত টাকা ও মোবাইল ফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে গাড়িটি থামিয়ে ড্রাইভার সুজন পিছনের সিটে ঝুকে নাদিমের চুল টেনে ধরে এবং আতাহার আলী, ইশারত মন্ডল ও স্বপন মিলে নাদিমকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে নাদিমের পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। নাদিম তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে তাকে নামিয়ে দেওয়ার কাকুতি-মিনতির একপর্যায়ে তাকে গাড়ী থেকে বাড়িউড়ায় সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট এর দিকে যেতে থাকে। কিছুদূর যাওযার পর প্রাইভেটকারটি ঘুড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে যেতে থাকে। নাদিম আহত অবস্থায় একটি সিএনজি ড্রাইভারকে থামিয়ে ঘটনাটি বলে। সিএনজি ড্রাইভারের মোবাইল ফোন থেকে ফোন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ কন্ট্রোলরুমকে জানায়।
বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান এর সার্বিক দিক নির্দেশনার আলোকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতী প্রাপ্ত) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, পিপিএম সেবা এর তদারকিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা, সরাইল থানা, আশুগঞ্জ থানা, বিজয়নগর থানার সমন্বয়ে একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে প্রাইভেটকারটি আটকের অভিযান চালায়। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার স্পেশাল-৪ এর ডিউটিরত এসআই সুমন চন্দ্র চক্রবর্তী সঙ্গীয় ফোর্সসহ সুহিলপুর বাজারে বেরিকেড দিয়ে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত কার ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের আটকের চেষ্টা করলে কারটি মিশুক মনি নামক পেট্রোল পাম্পে কারটি ঢুকিয়ে পলায়নের চেষ্টা চালায়। পরে ছিনতাইকারী ইশারত মন্ডল, মোঃ আতাহার আলী ও ড্রাইভার সুজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় অপর ছিনতাইকারী স্বপন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়ক, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ গাজীপুর, টঙ্গী, ময়মনসিংহ, চন্দ্রা, নবীনগর এলাকায় তারা দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রী বেশে লোকজনের সর্বস্ব লুন্ঠন করে আসছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে মর্মে জানা যায়। এ বিষয়ে সরাইল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।
আপনার মন্তব্য লিখুন