নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবিতা : মানুষের সাথে আমার খুব অভিমান হয়—–ফাতিহা প্রীতি

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ , ৩ জুন ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

মানুষের সাথে আমার খুব অভিমান হয়
———– ফাতিহা প্রীতি
মণিমাসীদের উঠোন পেরিয়ে ঠিক বামেরদিকে রক্তজবার গাছ,
পাশেই হেঁশেলের দরজা ধরে তরতর করে বেড়ে উঠেছে অলকানন্দার ঝোঁপ।
মণিমাসীদের দুতলাবাড়ি, কাঠের।
ক্ষয়ে আসা সবুজ রঙের বাড়িটায় শৈশবের ছোপ ছোপ দাগ।
পেছনেই বিশাল একটা আমগাছ। কালো থকথকে শরীর। সেই কত পুরনো কে জানে!
আচ্ছা! মণিমাসীরা ঠিক কতবছর আগে ওপাড়ায় বসত গড়েছিলো?
একটা কলতলাও ছিলো। শেওলা সবুজ।
দিদিমা, মণিমাসীর মায়ের কথা বলছি,
একবার খুব করে হুল ফুটিয়েছিলো একটা শিংমাছ।
দিদিমার সেকি ব্যথা!
দাদু যখন মারা গেলো
দাদুর পায়ের কাছে দিদিমাকে তার ধবধবে ফরসা হাতের শাখাদুটো ভেঙে ফেলতে দেখলাম!
ভীড়ের মধ্য থেকে কেউ একজন এসে দিদিমার কপাল থেকে সিঁদুরটাও মুছে দিলো!
কি কষ্ট!কি ব্যথা!
সদরদরজা পেরোলেইতো হলদে করবীর আলোয় বাড়িটা ঝলমল করত।
ঠিক তার নিচে তুলসিমঞ্চ।
দাদুর চিতা ভস্মের অবশিষ্টাংশ পোঁতা আছে ওখানে।
চিরচিরে বড়ইফুলে লেপা উঠোন।
কতকাল আগে মণিমাসী ভাইফোঁটা দিয়েছিলো,
রাখি পড়িয়েছিলো শাহীন মামাকে।
কত ছোট তখন আমি!
অতশত কি বুঝতাম!
শুধু ভেবে যেতাম হিন্দু-মুসলমানে ভাইবোন কেমন করে হয়!
মানুষের সাথে আমার খুব অভিমান!
দেশভাগতো কত আগেই হয়ে গেছে।
আর আমার সেই ছোট্ট শহরটা,
সেখানে আজান ও কীর্তন একসাথে হয়।
তবু চলে গেলো মণিমাসীরা।
বাড়িটা বেঁচে দিলো। সাথে আমার একউঠোন শৈশব।
শুনেছি মণিমাসী আসামে।
সেখানেও দুতলাবাড়ি। খুব করে সংসার পেতেছে।
কোনো একবার যদি পেয়ে যাই
দেখা হয় যদি কোনোদিন,
খুব করে বকব। খুউব!
তারপর খুব করে জড়িয়ে ধরে বলব,আমার শৈশব বেঁচতে একবারও কি তোমার বুক কাঁপেনি?
দাদুর চিতাভস্ম?তুলসীমঞ্চের নিচটা?
নতুন মালকিনের ইটপাথরের নিচে নিঃশ্বাস আটকে মারা পড়েছে এককালের কত সুখ।
খুব অভিমান হয় মানুষের উপর।
খুব অভিমান…..

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »