অনন্যার সূচনা নতুন প্রজন্মের উদ্দীপনা, নতুন আলো –আল আমীন শাহীন
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ , ২৬ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 1 year আগে
অনন্যার সূচনা নতুন প্রজন্মের উদ্দীপনা, নতুন আলো
——আল আমীন শাহীন
সম্ভাবনাময়ী এক ক্ষুদে কবির কবিতা আজ আমাকে মুগ্ধ করেছে । ছোটবেলা থেকে চেনা অনন্য প্রতিভার অধিকারী অনন্যা তার জীবনযাত্রায় সূচনা করেছে এক নবদিগন্তের। আজ ২৬ মাস মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস । স্বাধীকার সংগ্রামের সূচনার এই ঐতিহাসিক সময়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার নতুন যোদ্ধার কবিতা নিয়েই আমার আজকের লেখা।
আমার বাংলাদেশ
———–অনন্যা বণিক
বাংলাদেশে জন্ম আমার
বাংলাদেশে বাড়ি,
বাংলাদেশের বাংলা ভাষায়
কথা বলতে পারি।
বাংলাদেশের মাঠে ঘাটে
ঘুরে আমি বেড়াই,
নদীমাতৃক এ দেশের রূপে
মনটা আমার জুড়ায়।
নানান ধর্ম নানান বর্ণ
নানান রকম জাতি,
মিলেমিশে বাংলার ঘরে
জ্বালাই মোরা বাতি।
সবুজ শ্যামল বাংলার গাছে
ফোটে নানান ফুল,
এত সুন্দর বাংলার রূপের
পাই না তো কোনো কূল।
ষড়ঋতুর দেশের আমি
দেখি নানান ছবি,
এসব নিয়ে লিখে লিখে
হবো আমি কবি।
………
সুখেন্দু রঞ্জন বণিক, শিক্ষা বিস্তারে এক ব্যতিক্রমী মানুষ। শিক্ষকতা পেশায় যেমন শত হাজার শিক্ষার্থীর মনে আলো জ্বালিয়েছেন, তেমনি নিজ পরিবারকে আলোকিত করেছেন। একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। উনার মেয়ে অনন্যা বণিক । বাবার সাথে মা মাধবী বণিকের কোলে চড়ে, হাত ধরে লায়ন ফিরোজুর রহমান রেসিডেন্সিয়াল একাডেমিতে প্রায়শই আসতো।কোমলমতি এই অনন্যা দিনে দিনে বড় হয়েছে সাফল্যের সোপানে। দুদিন আগে সুখেন্দু স্যারের সাথে দেখা, মিষ্টি হাসিতে বল্লেন, স্যার এবারের বই মেলায় অনন্যার একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। শুনে আমি মহা খুশী । খবরটা আমারই নেয়ার কথা কিন্তু নিতে পারেনি, এছাড়া এর আগেও অনন্যার বিভিন্ন সাফল্যগাঁথা আমার লিখার কথা ছিল তা তেমন লিখতেপারিনি । ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নেতিবাচক নানা সংবাদ প্রচার করি অথচ সম্ভাবনা আর ইতিবাচক সংবাদগুলো উপেক্ষিত তাতে দুঃখ প্রকাশ করলাম।
যে সময়ে নতুন প্রজন্ম মোবাইলে আসক্ত হয়ে বই বিমুখ সেই সময়ে অস্টম শ্রেণী থেকে লেখালেখি করছে অনন্যা । এবছর বই মেলায় “সূচনা” নামক একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছে অনন্যা নিজেই। ক্ষুদে সম্ভাবনাময় এই লেখকের বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশণী সংস্থা নির্বাণ । অনলাইন অনলাইনথপরিবেশক: রকমারি.কম, অফলাইনথপরিবেশক: গণপ্রকাশন, কাঁটাবন, ঢাকা। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। বইটি সমাদৃত হয়েছে।
বই নিয়ে কথা হয়েছে অনন্যার সাথে , বইটি প্রকাশ করতে পেরে সে দারুণ খূশী। বারবার ফোন করে বলছিলো, স্যার আপনাকে ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি , আপনাদের দোয়ায় বইটি প্রকাশ করতে পেরেছি। সে জানায় , বইটির ব্যাপারে অণূপ্রেরণা দিয়েছেন মা-বাবা, প্রিয় দুই বোন, দাদুভাই আর আমার প্রিয় শিক্ষক শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহিম স্যার। আবদুর রহিম স্যারও প্রেরণার মানুষ, এবার বই মেলায় আমার প্রতিরোধ নামক একটি বই প্রকাশ হয়েছে। বইটির পান্ডুলিপি নিয়ে সাহিত্য একাডেমিতে গিয়েছিলাম, সেখানে তিনি তা শুনলেন আমাকে বল্লেন, বইটি প্রকাশ করতেই হবে। এই বইটি সময়ের প্রয়োজন। উনার কথায় আমার মনোবল গতি পেয়েছিল, আবদুর রহিম স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা আমারও ।
অনন্যা অনন্য প্রতিভার অধিকারী, কবি হিসেবে তার অভিষেক এবার হয়েছে। এর পূর্বে রয়েছে তার ব্যাপক সাফল্য । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য বিকাশে সে ছোটবেলা থেকেই এ জেলার প্রতিনিধি হয়ে জাতীয় পুরস্কার সহ নানা পুরস্কার এনে দিয়েছে।
তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিচ্ছি, অনন্যা বনিক ২০১০ সালের ৩১শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজপাড়ায় জন্মগ্রহণ করে। তার পৈতৃক ঠিকানা ফান্দাউক, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পিতা সুখেন্দু রঞ্জন বনিক ও মাতা মাধবী বনিকের তিন মেয়ের মধ্যে অনন্যা বড়। বর্তমানে সে সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী ছিল। পড়াশোনায় খুব ভালো সে। সাবেরা সোবহান স: বা: উ: বিদ্যালয়ে সে তিন বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।চিত্রাঙ্কন, সংগীত,অভিনয় ও আবৃত্তিতেও সে দক্ষ। ৩ বছরে তার চিত্রাঙ্কন ও ৪ বছরে তার গানের পথচলা শুরু হয়। চিত্রাঙ্কনে তার একাধিক জাতীয় পুরষ্কারের পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার রয়েছে এবং “ঈগলু” কোম্পানি কর্তৃক আয়োজিত রিয়েলিটি শো’তে সে চট্টগ্রাম বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। অভিনয়ে সে জাতীয় পর্যায় এবং সংগীতে বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত অংশ নিয়েছে । বিশেষ অর্জন: ১. ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেশব্যাপী চিত্রাঙ্কনে ১ম স্থান অধিকার করে বিশেষ পদক অর্জন। ২. জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০১৯ এ সারা বাংলাদেশে চিত্রাঙ্কনে ২য় হয়ে রৌপ্য পদক প্রাপ্তি। বিভিন্ন বিষয় ও ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত মোট ৩৩০ টি পুরষ্কার অর্জন করেছে।
শিক্ষক হিসেবে আমার কলিগ সুখেন্দু রঞ্জন বণিকের মেয়ে অনন্যা আমাদের মেয়ে, তিতাস পাড়ের মেয়ে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য বিকাশের ধারায় সে এক উজ্জ্জ্বল তারকা। অনন্যার জন্য অনেক অনেক দোয়া, তার প্রতিভার আলো ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বব্যাপী, তাকে অণুসরণ করে আরো অনন্যরা সুন্দরের মিছিলে যুক্ত হোক এই কামনা।
আপনার মন্তব্য লিখুন