নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-বাউনবাইরা-বি-বাড়িয়া—মোঃ জেহাদ উদ্দিন

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৪:৫৫ অপরাহ্ণ , ২ মে ২০২০, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে কিছু কিছু জেলার নাম একটু বড় বা উচ্চারণে কঠিন। যেমন, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
চাঁপাই নবাবগঞ্জের লোকজন তাদের জেলার নাম পুরোটা না বলে হরহামেশাই বলে থাকে ‘চাঁপাই’। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজন ‘বাউনবাইরা, বি-বাড়িয়া ইত্যাদি। এগুলো কথ্য ভাষা। এসবের মধ্যে খারাপ কোন উদ্দেশ্য নেই।
আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বেড়তলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া লোকাল বাসে যাওয়া-আসা করেছি। প্রতিটি লোকাল বাসে লেখা থাকত বি-বাড়িয়া-মাধবপুর-আশুগঞ্জ। বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেল্পার, যাত্রী সবার মুখে শোভা পেত ‘বাউনবাইরা, বি-বাড়িয়া’। এতে কারো মধ্যে কোন খারাপ উদ্দেশ্য (bad intention) বা mens rea (criminal motive) ছিল না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে কেউ অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে বা কথ্য ভাষায় বাউনবাইরা বা বি-বাড়িয়া বললে তাদেরকে মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার একটি প্রবণতা কারো কারো মাঝে এখন দেখা যায়। বিষয়টি আসলে এভাবে দেখা ঠিক নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পুণ্যভূমি। ১৯৯২ সালে যখন ভারতে হিন্দু মৌলবাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দিয়েছিল, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোন মন্দিরে কোন আঁচড় লাগতেও দেয়নি এ জেলার মানুষজন। পুলিশ-প্রশাসন নয়, বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুসলমানগণ তাদের হিন্দু ভাই-বোনদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। এর মধ্যে আমিও ছিলাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুজামণ্ডপগুলো সব সময় হিন্দু-মুসলিম মিলন মেলায় পরিণত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের সাথে যেমন একাকার হয়ে আছেন বারভূঁইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূঁইয়া ঈসা খাঁ, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ফখরে বাঙাল মাওলানা তাজুল ইসলাম, স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা (যাঁর আর্টিকেল ক্লার্ক রাজেন্দ্র প্রসাদ পরবর্তীতে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির আসন অলংকৃত করেন); ঠিক তেমনি একাকার হয়ে আছেন মা আনন্দময়ী, সাধক মনমোহন দত্ত, বিপ্লবী উল্লাস কর দত্ত, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দু-মুসলমানের সহাবস্থানের পুণ্যভূমি। এখানকার মানুষজন ধর্মভীরু, কিন্তু মৌলবাদী নয়। যদি মৌলবাদী হতো, যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম নিয়ে কারো মধ্যে সাম্প্রদায়িক কোন উষ্মা থাকত, তবে ১৯৮৪ সালে যখন জেলাটির সৃষ্টি হয়, তখন অন্তত একজন লোকও হয় তো নামটি পরিবর্তনের দাবি করত। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী এবং আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, এমন দাবি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন লোকও করেননি। এটিই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৌন্দর্য্য।
২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। তিনিও কোনদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাম নিয়ে কোন উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে আমরা শুনি নি। এটিই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশেষত্ব।
আসলে চাঁপাই নবাবগঞ্জকে যেমন শুধু চাঁপাই বলার মধ্যে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই, ঠিক তেমনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বাউনবাইরা বা বি-বাড়িয়া বলার মধ্যে কারোর কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে বলে আমরা মনে করি না। এগুলো হল আঞ্চলিকতা যা এক ধরনের সৌন্দর্য্যও বটে। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ না খোঁজাই ভালো।
তবে, আমার অনুরোধ থাকবে, আপনাদের একটু কষ্ট হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শব্দটি পুরোটাই লিখবেন এবং তা অবশ্যই শুদ্ধ বানানে। সংক্ষিপ্ত আকারে লিখবেন না দয়া করে।
———
লেখক: সরকারের উপসচিব। নজরুল গবেষক। প্রতিষ্ঠাতা: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্যানিকেতন, বেড়তলা, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নজরুল স্টাডি সেন্টার, ঢাকা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »