নতুন মাত্রা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন (পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

 ঢাকা      শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকারগ্রস্ত মানসিকতা থেকে মুক্ত হবো কবে? — আশরাফ পিকো

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ , ১১ নভেম্বর ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

মনের মধ্যে ক্ষোভ রেখে সুখে থাকার ভাব ধরা যায় না। ক্ষোভ চেপে রাখা আরও বড় কষ্টের। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেই অনুজ আল আমীন শাহীনের নিষ্প্রাণ হাসি দেখতে পেলাম। দুঃসংবাদটিও জানলাম। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী গ্রাম্য স্বার্থ দলাদলির শিকার হয়ে খুন হয়েছে। যতটুকু জানতাম সে একজন নিরেট নিরঅহংকারী নিরলস সাহিত্যকর্মী, দারুণ সম্ভাবনাময় কবি সংগঠক ছিলো। শাহীনের সাথে গিয়ে একটি সাহিত্য আসরে তার কবিতা শুনেছিলাম,সুন্দর নিয়ে সে স্বপ্ন দেখতো খুব। সে দেখায় দোয়াও চেয়েছিল সে কিছু করতে চায়, মাঝ রাস্তায় স্বপ্নটির অপমৃত্যু হলো। তার এই মৃত্যুটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায়শই গ্রাম্য মারামারি নৃশংস হত্যাকান্ড গ্রামে গ্রামে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে রণসজ্জা, মামলা মোকদ্দমা দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। প্রতিবছরই বিশেষ করে ঈদে পার্বনে এসবকে কেন্দ্র করে বহু হতাহতের ঘটনা শোনার একরকম মানসিক প্রস্তুতি নেয়াই থাকে। লজ্জাজনক হলেও সত্য প্রশাসন থেকে শুরু করে ঢাকায় কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বাস করা অন্যজেলার লোকজনদের কাছে মাঝে মাঝে তার জন্য খুব লজ্জিত হতে হয় আমাদের। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় অংশকে এইসব ঘটনা নিয়ে খুব বেসামাল থাকতে হয়। এতকিছুর পরও সাহিত্যকর্মীর এই মৃত্যুটি আমাদের ক্ষোভকে বুকের ভেতর আটকে রাখতে দিচ্ছে না। কার কাছে বিচার চাইবো? প্রশাসনই বা কি করবে? স্বার্থপরতার বিকারগ্রস্ত রোগী আমরা সবাই। পান থেকে চুন খসলেই কিংবা নিলর্জ্জ স্বার্থে আঘাত লাগলেই আমরা পশু হয়ে যাই। কে করবে এর চিকিৎসা?
শস্য শ্যামলার প্রান্তর গুলো একসময় ছিলো মেঠোপথ সারি সারি বাঁশ ঝাড়, সবুজ প্রান্তর, পুথি পাঠ , জারি গান আর উঠোন আড্ডার স্বর্গীয় আবহ। গ্রাম্য ঝামেলা গুলোও উঠোনেই শেষ হয়ে যেত। মহল্লার মুরুব্বী, গ্রামের ইমাম, স্কুল মাস্টার উনারাই ছিলেন সমস্ত কিছুর নিয়ামক। শক্ত হাতে ধরে রাখতেন গ্রামের শান্তিময় পরিবেশ। তাঁদের সততা ব্যক্তিত্ববোধ ধর্মীয় নীতিমালার আদলেই সমস্ত কিছুর সমাধান হতো। ব্যক্তি¦ সম্পন্ন অভিভাবকদের সৎ নির্ভিক সিদ্দান্ত এতটাই গ্রহণযোগ্য ছিলো যে বিসয়গুলো কোর্ঠ কিংবা পুলিশ পর্যন্ত পৌছাতে হতো না। কারো হাতে লাঠি নেয়ার সাহস তো দূরের কথা। সে পরিবেশ কতিপয় নষ্ট মানুষ, সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ,আধিপত্যবাদী ও নষ্টপ্রভাবশালীদের ব্যক্তিস্বার্থ সুজলা সুফলা সে পরিচিত গ্রামগুলোকে নরকে পরিণত করেছে। এসবের অবসান আমাদেরইকেই করতে হবে। ক্ষোভ বুকের ভেতর আর চেপে রাখা যাবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ওদের বিরুদ্ধে। তননও তা চাইতো। তাকে বিদায় করা হয়েছে। এখন এ দায় আমাদেরই নিতে হবে।
মৃত্যু মৃত্যুই । এক অমোঘ পান্ডুলিপির শেষ পৃষ্ঠার মঞ্চায়ন। যা আমাদের সবারই হবে। কিন্তু দুঃখ লাগে তখনই যখন মৃত্যু নিয়েও কতিপয় তথাকথিত সংস্কৃতি কর্মী ফরিয়া সাহিত্যিক,মৌসুমী দালাল নিজেদের প্রচার কিংবা প্রসারের অথবা নিলর্জ্জ ভন্ডামীর আড়ালে নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানায়। পরিশেষে এটাই বলতে হয়। মৃত্যুতেও আমরা একত্র হতে পারি না। অথচ আমরা প্রত্যেকেই ভাবি আমাদের নিজেদের মৃত্যুর পরে জানাজায় সবাই আসবে।
শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সুস্থ সংস্কৃতির জয় হোক। অপশিক্ষা, অপব্যাখ্যা, অপবাদ, অপসংস্কৃতি, হিংসা দলাদলি ধর্মীয় দালালী থেকে মুক্তি পাক এ প্রান্তর, এ দেশ।
———————-
লেখক : ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন
অনুবাদ করুন »